পরমাত্মারূপে ভগবান প্রত্যেক জীবের অন্তরে নিত্য বিরাজমান। সর্বস্য চাহং হৃদি সন্নিবিষ্টো (গীতা ১৫/১৫) কিন্তু ভগবদবিমুখ ব্যক্তি কখনই তাঁকে জানতে পারে না। মূঢ় ব্যক্তিরা ভগবানকে অবজ্ঞা করে। অবজানন্তি মাং মূঢ়াঃ (গীতা ৯/১২)। ভগবান প্রতি অণু-পরমাণুতেও রয়েছেন, অণ্ডান্তরস্থ পরমাণুচয়ান্তরস্থং (ব্রহ্মসংহিতা) কিন্তু তাকে জানতে হলে শ্রদ্ধাভক্তি দরকার। যার মধ্যে ভগবদ্ভক্তি রয়েছে সে-ই ভক্ত। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন, ভক্ত্যা মামভিজানাতি (গীতা ১৮/৫৫) ভক্তির দ্বারাই ভগবানকে জানা সম্ভব।
শ্রীমদ্ভাগবতে ভগবানের উক্তি- সাধবো হৃদয়ং মহ্যং সাধূনাং হৃদয়ং ত্বহম্। মদনৎ তে ন জানন্তি নাহং তেভ্যো মনাগপি।। “শুদ্ধ ভক্ত সর্বদা আমার হৃদয়ে থাকেন এবং আমিও সর্বদা শুদ্ধ ভক্তের হৃদয়ে থাকি। ভক্তরা আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে জানে না, আমিও তাদের ছাড়া আর কিছুই জানি না। (ভাঃ ৯/৪/৬৮) ভগবান সর্বদা ভক্তবৎসল। ভক্ত সর্বদা ভগবানের নামকীর্তন, মহিমা প্রচার, স্তবস্তুতি করেন। ভগবানের নাম, মহিমা, রূপ, গুণ, লীলা ইত্যাদি কীর্তন করলে ভগবান অত্যন্ত প্রীত হয়ে ভক্তস্থানে অবস্থান করেন।
শ্রীনারদ মুনিকে ভগবান বলেছেন-
নাহং তিষ্টামি বৈকুণ্ঠে যোগিনাং হৃদয়েষু বা।
মদ্ভক্তাঃ যত্র গায়ন্তি তত্র তিষ্ঠামি নারদ।।
হে নারদ, বৈকুণ্ঠে কিংবা যোগীদের হৃদয়ে আমি থাকি না। যেখানে আমার ভক্তরা গান করে, সেইখানেই আমি অবস্থান করি। (পদ্মপুরাণ)
অনেক সময় লোকে ভগবানের ভক্ত হতে চায়, কিন্তু তাঁর ভক্তের ভক্ত হতে চায় না। কিন্তু ভক্তরূপে ভগবান শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভু নিজের পরিচয় জ্ঞাপন করেছেন যে, তিনি হচ্ছেন গোপীভর্তুঃ পদকমলোর্দাসদাসানুদাসঃ- ভগবানের ভক্তের দাসানুদাসানুদাস। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলছেন-
মম ভক্তা হি যে পার্থ ন মে ভক্তাস্তু মে মতাঃ।
মদ্ভক্তস্য তু মে ভক্তা-স্তে মে ভক্ততমা মতাঃ।।
হে পার্থ! যারা কেবল আমার ভক্ত অর্থাৎ, কেবল আমার পূজা করে কিন্তু আমার ভক্তের পূজা করে না, তারা প্রকৃতপক্ষে আমার ভক্ত নয়; কিন্তু যাঁরা আমার ভক্তের ভক্ত, তাঁরাই আমার সর্বশ্রেষ্ঠ ভক্ত। (আদিপুরাণ)
No Comment! Be the first one.